সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন

খবরের শিরোনাম:

রমাদান মাসে কোরআন প্রশিক্ষণে সমস্যা এবং এর সমাধান

এম আব্দুল্লাহ::
মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। এসকল নবী- রাসূলদেরকে গাইডবুক হিসেবে সহীফা ও কিতাব দিয়েছেন। এসব কিতাব সমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ কিতাব হচ্ছে আল-কোরআন। পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের উপরে ঈমান আনা এবং আল-কোরআনকে মেনে চলা মুসলিমদের উপরে আল্লাহ তায়ালা ফরজ করেছেন।
আল-কোরআন এসেছে বিশ্ব মানবতাকে হিদায়াতের সঠিক পথের সন্ধান দেয়ার জন্য। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
شَہۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡہِ الۡقُرۡاٰنُ ہُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡہُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ ۚ
‘রমযান মাস, যাতে কোরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের হেদায়াতস্বরূপ এবং হেদায়াতের সুস্পষ্ট নিদের্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।’ (সূরা আল-বাকারা-১৮৫)
হেদায়াতের এই কিতাব (আল-কোরআন) শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপরে ফরজ করা হয়েছে। প্রত্যেক নর-নারীর ওপর কোরআনুল কারিম এতটুকু সহিহ-শুদ্ধ করে পড়া ফরজে আইন যার দ্বারা অর্থ পরিবর্তন হয় না। অর্থ পরিবর্তন হয় এমন ভুল পড়ার দ্বারা নামাজ নষ্ট হয়ে যায়।
‎، عَنْ عُثْمَانَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ ‏”‏ ‏.
উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত: নবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ঐ ব্যক্তি, যে ব্যক্তি কুরআন নিজে শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়। (সুনানে আবু দাউদ- ১৪৫২)
•সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত শিক্ষা করার ফজিলত:
হযরত আয়েশা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেন, যারা সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করে, তারা নেককার সম্মানিত ফেরেশতাগণের সমতুল্য মর্যাদা পাবে এবং যারা কষ্ট সত্ত্বেও কোরআন সহিহ-শুদ্ধভাবে পড়ার চেষ্টা ও মেহনত চালিয়ে যায়; তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৪৫৪)
•কোরআন বিহীন শরীর বিরান বাড়ির মত:
যে ব্যক্তি কোরআন অধ্যয়ন করবে না, কোরআনকে বোঝার চেষ্টা করবে না, কোরআন নিয়ে গবেষণা করবে না অর্থাৎ যে দেহের মধ্যে আল-কোরআনের আলো নেই সেটা উজাড় বাড়ির মতো, ছাড়া বাড়ির মতো। মানুষ ছাড়া বাড়িতে যেমন সাপ, বিচ্ছু, তেলাপোকা ইত্যাদি পোকা-মাকড় বসবাস করে। ঠিক তেমনি যে দেহের মধ্যে কোরআন নেই সেই দেহে শয়তান বাস করে।
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, যেই দেহের মধ্যে কুরআনের কোনো শিক্ষা নেই সেই দেহটি উজাড় বাড়ির মত। (তিরমিযি- ২৯১৩)
রমজান মাসে কোরআন শিখতে প্রতিবন্ধকতা:
ছেলেদের ক্ষেত্রে:
১. কোরআন শিখতে আমার শরম করে।
২. ছোট-বড় একসাথে কিভাবে পড়বো।
৩. বয়স অনেক হয়েছে, এখন ব্যস্ততা এবং বাস্তবতা অনেক যার কারণে সময় নেই।
মেয়েদের ক্ষেত্রে:
১. প্রাপ্ত বয়স্কা হয়ে গেছি, এখন কোরআন শিখতে শরম করে।
২. বড় হওয়ার কারণে কোরআন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে শিখতে পরিবার থেকে বাঁধা।
৩. বাড়ির অনেক কাজ আছে সেগুলো করা লাগে।
দুনিয়াবি শিক্ষার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই:
১. আমরা মায়ের পেট থেকে তো আর কোনো কিছু শিখে আসি না। আমরা জন্মের পর থেকে পর্যায়ক্রমে অনেক কিছু শিখি এবং শিখতে হয়।
২. বড় হয়ে গেলে কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলে লজ্জার কিছু নেই।
৩. মেয়েদের ক্ষেত্রে IELTS, Spoken English, Computer  & Others কোর্সগুলা গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে করা যায় কোন সমস্যা হয় না।
৫. মেয়েরা কলেজে পড়ার জন্য গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে, হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেন। হোস্টেলে কার সাথে থাকছেন কি করতেছেন পরিবার কিছুরই খোঁজ রাখছেন না।
এসব সমস্যা গুলোর সমাধান:
১. মুসলমান হিসেবে কোরআন শিখার ক্ষেত্রে আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকতে হবে।
২. দুনিয়াবি স্বার্থের জন্য যদি এত এত স্যাক্রিফাইস করা যায়। তাহলে, আখেরাতের সফলতার জন্য কি একটু হলেও স্যাক্রিফাইস করা যায় না?
৩. কোরআন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে শিখতে যদি লজ্জা লাগে তাহলে শিখার তো অনেক পথ আছে; সবকিছুই এখন আমাদের হাতের নাগালে, শুধু আমাদের খোঁজে নিতে হবে। যেমন: অনলাইনে ফ্রী এবং পেইড কোর্স আছে, মেয়েদের জন্য আলাদাভাবে মহিলা প্রশিক্ষককের মাধ্যমে ক্লাস নেয়া হয়।
৪. জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। সন্তানদেরকে ইসলামি জ্ঞান অর্জনে সহযোগিতা এবং কঠোর হতে হবে।
৫. অভিভাবকদেরকে ইসলামি অনুশাসনে আরও যত্নশীল হতে হবে। পরিবারে দ্বীনি পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে সহীহ-শুদ্ধভাবে কুরআন শিক্ষার তাওফীক দিন। আমীন।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.